জেলা পরিষদ, দিনাজপুর
২৭, এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৪৩ AM

জেলা পরিষদ, দিনাজপুর

জেলা পরিষদ, দিনাজপুর ওয়েব সাইটটে আপনাকে স্বাগতম।

জেলা পরিষদ পরিচিতি

জেলার পরিচিতি

সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যমন্ডিত দিনাজপুরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধবিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ছোট নাগপুর, বিন্ধ্যা পর্বত প্রভৃতি লাখ লাখ বছরের প্রাচীন স্থানগুলোর মৃত্তিকার সমগোত্রীয় দিনাজপুরের মাটিবহুকাল পূর্বে হিমালয় পর্বতের ভগ্নীরূপে জন্ম নেয়া বরেন্দ্র ভূমির হৃদয়-স্থানীয় স্থান দিনাজপুরলোকশ্রুতি অনুযায়ী জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতাতাঁর নামানুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুরপরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর

 

বাংলাদেশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের সূচনায় সৃষ্ট আদি জেলা শহরগুলির অন্যতম দিনাজপুরইংরেজ সেনারা পলাশী যুদ্ধের আট বছর পর ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এ এলাকা জয় করেফলে নবাবী শাসনের অবসানের সঙ্গে পতন হয় সাবেক রাজধানী ঘোড়াঘাট নগরেরতারপর থেকে গড়ে উঠতে শুরু করে দিনাজপুর শহর

দিনাজপুর গেজেটিয়ারের মতে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে জেলা শাসনের জন্য দিনাজপুরে স্বতন্ত্র স্থায়ী কালেক্টরেট স্থাপিত হয়তার পূর্ব পর্যন্ত দিনাজপুর-রংপুর যুক্ত কালেক্টরেট ছিলরাজসেরেস্তা থেকে নথিপত্র প্রত্যাহার করে জিলা স্কুলের পুরাতন ভবনটিতে (সম্প্রতি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে) কালেক্টর অফিস স্থাপিত হয়জেলা স্কুল হওয়ার পূর্বে ভবনটি রাজকাচারী ছিলতখন কালেক্টর ছিলেন মি. ম্যারিওয়েট; রাজা ছিলেন রাজবংশের নাবলক উত্তরাধিকারী রাধানাথ

 

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি মিঃ কোট্রিল ঘোড়াঘাটের শেষ মুসলিম ফৌজদার করম আলী খানকে পরাজিত করে এই অঞ্চলে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন অঞ্চলে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে ইংরেজরা ১৭৮৬ সালে নতুন জেলা গঠন করে এবং ১৭৯৩ সালে দিনাজপুরে জেলার দপ্তর স্থাপন করেদিনাজপুরের কালেক্টর মিঃ এইচ জে হ্যাচ (১৭৮৬-১৭৯৩ পর্যন্ত কালেক্টর ছিলেন) এর আমলে দিনাজপুরে প্রথম নিজস্ব কালেক্টরেট ভবন নির্মিত হয় বর্তমান বাহাদুর বাজারস্থ গোলকুঠি বাড়ীতেজেলা কালেক্টরেট নির্মিত হওয়ায় এবং সেই সঙ্গে সুবিন্যস্ত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় আধুনিক জেলা শহরটির গড়ন শুরু হয় রাজাদের দেয়া কয়েকটি মৌজার উপররাজবাড়ী থেকে সমস্ত নথিপত্র প্রত্যাহার করে গোলকুঠি ভবনে আনা হয়মুগল আমলের ঘোড়াঘাট নগর তখন সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্তদিনাজপুর শহর তখন জেলা শাসনের কেন্দ্র ও সবকিছুর কর্মস্থলে পরিণত হতে শুরু করে১৮৩৩ থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশ পূর্ণিয়া, রংপুর ও রাজশাহীর মধ্যে অন্তর্ভুক্তি ও বিচ্যুতি ঘটে

 

১৮০০ হইতে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুরের বড় বড় এষ্টেট পূর্ণিয়া, রংপুর এবং রাজশাহী জেলার সংগে যুক্ত করা হয়১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে আর একটি সুবিস্তৃত অংশ বগুড়া ও মালদহ জেলার সাথে যুক্ত করার পূর্ব পর্যন্ত আর কোন রদবদল করা হয়নি১৮৬৪-১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে খট্রা নামক একটি সুবিশাল পরগণাকে এ জেলা হতে ছেঁটে বগুড়া জেলার সাথে যুক্ত করা হয়১৮৬৮-১৮৭০ সালের দিকে এ জেলার একটি বৃহৎ অংশ বগুড়া ও মালদহ জেলায় যুক্ত হয়১৮৯৭-১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে এ জেলার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত মহাদেবপুর থানা রাজশাহীতে স্থানান্তরিত হয় পাকিস্তান-পূর্ব আমল পর্যন্ত আর কোন রদবদল হয়নি

 

১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট রাজ্য ইংরেজ শাসিত ভারতের বুকে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি আলাদা রাষ্ট আত্মপ্রকাশ করেঐ সময়ে রাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুসারে এ জেলার দশটি থানা ভারতের পশ্চিম বাংলা প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং পশ্চিম দিনাজপুর জেলা গঠন করেঅপরদিকে পশ্চিম বাংলার জলপাইগুড়ি জেলা হতে তেতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ ও পাটগ্রাম থানা দিনাজপুরের সাথে যুক্ত হয়পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সরকার শাসনকার্যের সুবিধার্থে পাটগ্রাম থানাটি রংপুরের সাথে এবং দিনাজপুরের দক্ষিণ অংশের ধামইর, পোরশা ও পত্নিতলা থানা তিনটি তৎকালীন রাজশাহীর নওগাঁ মহকুমার সাথে যুক্ত করেসর্বশেষ ১৯৮৪ সালে দিনাজপুরের দুটি মহকুমা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় আলাদা জেলার মর্যাদা লাভ করে

 

প্রাগৈতিহাসিক দিনাজপুরঃ

সাহিত্য-সংস্কৃতির ঐতিহ্যমন্ডিত দিনাজপুরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন এবং সমৃদ্ধবিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ছোট নাগপুর, বিন্ধ্যা পর্বত প্রভৃতি লক্ষ লক্ষ বছরের প্রাচীন স্থানগুলির মাটির সমগোত্রীয় দিনাজপুরের মাটিবহুকাল পূর্বে হিমালয় পর্বতের ভগ্নীরূপে জন্ম নেয়া বরেন্দ্র ভূমির হৃদয়-স্থানীয় স্থান দিনাজপুর

চৈনিক ও ইউরোপীয় ভ্রমণকারীদের বিবরণীতে বৃহৎ ও সুনাব্য নদীরূপে বর্ণিত করতোয়া নদীর তীরে কোন এক অজ্ঞাত সময় থেকে এক উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল করতোয়ার তীরে গড়ে উঠে বলে একে করতোয়া সভ্যতা হিসেবে অভিহিত করা যায়অনুমিত হয়, মধ্যযুগে মহাস্থান, বানগড় এবং মোগল যুগে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটই ছিল এই সভ্যতার প্রধান নাগরিক কেন্দ্রইতিহাস খ্যাত পঞ্চনগরী দিনাজপুরেই অবস্থিত ছিল

 

পাল ও সেন আমলে দিনাজপুরঃ

যমুনা-করতোয়ার অববাহিকায় অবস্থিত এ নগরীর বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষগুলি চরকাই, বিরামপুর, চন্ডীপুর, গড়সিংলাই, দামোদরপুর ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ নামে পরিচিতমৎস্যন্যায় যুগে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর পাড়ে এক উল্লেখযোগ্য বৌদ্ধ বিহার নির্মিত হয়স্থাপত্য শৈলীর বিবেচনায় এটি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ বিহারের মধ্যে তৃতীয় স্থানীয়১৯৬৮ সালে প্রথম বার এবং ১৯৭৩ সালে দ্বিতীয় বার খননের পর ৪১টি প্রকোষ্ঠসহ বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়এখানের অনেক প্রত্নদ্রব্য দিনাজপুর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে৮ম শতকে গোড়াপত্তন হওয়া পাল বংশের ভ্রাম্যমাণ রাজধানীর বহু ধ্বংসাবশেষ দিনাজপুরের মাটিতে মিশে আছেপাল রাজত্বকালে পার্বত্য কম্পোজ জাতির আক্রমণ এবং কৈবর্ত বিদ্রোহের ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে দিনাজপুরসেন রাজত্বকালে নির্মিত অসংখ্য দেব-দেবীর প্রস্তরমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে দিনাজপুরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়

 

আফগান ও মুঘল আমলে দিনাজপুরঃ

লক্ষ্মণসেনকে বিতাড়িত করে বিজেতা বখতিয়ার খিলজী ১২০৪ সালে বরেন্দ্র ভূমি বিজয় করে দিনাজপুরের দেবকোটে মুসলিম রাজধানী স্থাপন করেন১২২০ সালে গৌঁড়ে স্থানান্তরিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দেবকোর্টই ছিল বাংলার রাজধানী

 

চেহেলগাজীগণ দিনাজপুরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশরাজা গোপালের সময় ইসলামের বার্তা নিয়ে চেহেলগাজীদের আবির্ভাব হয়ন্যায়ের স্বার্থে রাজা গোপালের সেনাদলের সাথে ভয়ানক যুদ্ধে মুজাহিদগণ শহীদ হয়েও ভক্তদের মনে মহান গাজীত্বের সম্মান লাভ করেনগাজীগণ সংখ্যায় ৪০ জন হওয়ায় তাঁদের ৫৪ ফুট দীর্ঘ সমাধিস্থলটি চেহেলগাজীর মাজার নামে পরিচিত যা দিনাজপুর শহরের উত্তর উপকন্ঠে অবস্থিতএছাড়া দিনাজপুরের গড়মল্লিকপুর এবং খানসামার দুহসুহ গ্রামে যথাক্রমে ৮৪ ফুট এবং ৪৮ ফুট দীর্ঘ দুটি মাজার আছে যা যথাক্রমে গঞ্জে শহীদ এবং চেহেলগাজী নামে পরিচিত

 

দিল্লী শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সুরক্ষায় ইলিয়াস শাহ্ কর্তৃক নির্মিত ঐতিহাসিক একডালা দুর্গের অবস্থানও ছিলো দিনাজপুরের মধ্যেইহত্যার রাজনীতির মাধ্যমে গৌড়ীয় সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহকে অপসারণ করে গৌড়ের মসনদে আরোহণকারী রাজা গণেশ দিনাজপুরের অধিবাসী ছিলেনপরবর্তীতে গণেশ পুত্র যদু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জালালুদ্দীন নাম ধারণ করে গৌড়ের সিংহাসনে আরোহণ করেন

 

গৌড়ীয় সুলতান বরবক শাহের সেনাপতি ইসমাইল গাজীর নেতৃত্বে আত্রাই নদীর তীরবর্তী মাহিসন্তোষ নামক স্থানে কামতারাজের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয় এবং পরে কামতাপুর দুর্গ (দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে) বিজীত হয়ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদীর পশ্চিমতীরে ইসমাইল গাজী এক মুসলিম নগরীর গোড়াপত্তন করেনপরবর্তী কালে ইহা বিখ্যাত ঘোড়াঘাট সরকার নামে পরিচিত হয়জিন্দাপীর নামে অভিহিত ইসমাইল গাজী ও বহু আউলিয়ার মাজার ঘোড়াঘাটে বিদ্যমান

 

১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান বরবক শাহ সম্পাদিত এবং চেহেলগাজীর মাজারে প্রাপ্ত একটি ফার্সী শিলালিপি থেকে জানা যায় দিনাজপুর শহরসহ উত্তরাংশের শাসনতান্ত্রিক এলাকার শাসনকর্তা নসরত উলুখ নসরত খাঁন চেহেলগাজী মাজারের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন মসজিদ বলে চিহ্নিতহোসেন শাহী আমলের বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলাম প্রচারকের মাজার দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, দেবকোটসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছেএছাড়া দিনাজপুরের বুকে শেরশাহী আমলের মসজিদ, সড়ক ও সেতু শূরবংশীয় অধিকারের প্রমাণ বহন করে

 

মোগল আমলে বাংলা বিজয়ের পর সমগ্র বাংলাদেশকে ২৪টি সরকারে ভাগ করা হয় এতে দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট, বরকাবাদ, তাজপুর এবং পিঞ্জরা নামের ৪টি সরকার অন্তর্ভুক্ত হয়সবদিক বিবেচনায় বাংলার ঘোড়াঘাট শ্রেষ্ঠ সরকার ছিল ঘোড়াঘাটের শেষ ফৌজদার ছিলেন ঐতিহাসিক গ্রন্থ মোজাফফরনামারচয়িতা করম আলী খানসে সময় মসজিদ ও মুসলিম নগরীতে পরিণত হয় মোগল আমলের ঘোড়াঘাটবিখ্যাত সূরা মসজিদ ও আউলিয়াদের মাজারে ধন্য হয় ঘোড়াঘাট

মানচিত্রে দিনাজপুর

দিনাজপুর জেলাটি বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে একটি জেলা জেলাটির চারদিকের সীমান্তে রয়েছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, রংপুর জেলা, নিলফামারী জেলা, ঠাকুগাও জেলা ও পঞ্চগড় জেলামানচিত্রে দিনাজপুর জেলার ভৌগলিক অবস্থান দেখানো হয়েছে



চেয়ারম্যান
জনাব মো: দেলওয়ার হোসেন
জনাব মো: দেলওয়ার হোসেন
বিস্তারিত
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
জনাব মোঃ মোখলেছুর রহমান
জনাব মোঃ মোখলেছুর রহমান
বিস্তারিত
ওয়েব এডমিন